মনীষীদের খাওয়া দাওয়া পর্ব ১ - Bengali legends and their favorite foods part 1

মনীষীদের খাওয়া দাওয়া পর্ব ১ - Bengali legends and their favorite foods part 1

মনীষীদের খাওয়া দাওয়া - প্রথম পর্ব

১. বাঙালির গর্ব বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের খাওয়া-দাওয়ার কেমন অভ্যাস ছিল

'মানিকদা মানে সত্যজিৎ রায় ছবি তৈরির সময় যেমন খুঁতখুঁতে, খাওয়ার ব্যাপারেও তেমনই রসিক। নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করেন-মাছ-মাংস দুটোই বেশ লাগল। কোথা থেকে আনালে? দাদা অমনি সবিস্তারে জানায় সিরাজগঞ্জ থেকে কীভাবে টাটকা মাছ নুন দিয়ে আনা হয়েছে। পাঁঠার মাংস কেনা হয়েছে গোপালদার দোকান থেকে। 'গোপালদা বা গোপাল মুখোপাধ্যায় নামটা বললে হয়তো চিনতে অসুবিধে হতে পারে। আসলে পুরোনো আমলের লোকের কাছে ওর পরিচয় ছিল পাঁঠা-কাটা-গোপাল নামে। বাঙালির পাঁঠার দোকান বলতে সেকালে গোপালদার দোকানকেই বোঝাত। দাদার তাই কড়া হুকুম ছিল – মাংস আনতে হবে গোপালদার দোকান থেকে। 'অস্কার' বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও মহান শিল্পী সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)। তিনি যেমন খেতেন, তেমন খাওয়াতে ভালোবাসতেন। তবে তাঁর আহার ছিল পরিমিত। সব থেকে প্রিয় ছিল মুড়ি ঘি আর চিনি দিয়ে মেখে খাওয়া। এছাড়া নানান খাবারের মধ্যে তিনি লুচি, অড়হর ডাল, বেগুনভাজা, চিকেন, স্যান্ডউইচ, দই, ডাল, বিভিন্ন সবজি আর ভালোবাসতেন মাংস। তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ফিশ ফ্রাই। তপন থিয়েটারের বিপরীতে 'আপনজন'-এর।

"আহারের এত বাহার এ শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব" - সংলাপ সত্যজিৎ রায় [সিনেমার নাম আগন্তুক]

সত্যজিতের খাওয়াদাওয়া নিয়ে লিখেছিলেন চিরঞ্জিত দাস

"আমাদের বাঙালির গর্ব বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের খাওয়া-দাওয়ার কেমন অভ্যাস ছিল সেটা অনেকদিন ধরেই জানতে ইচ্ছা করছিল৷ সেটা জানতে পেরে গেলাম আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে৷ কিছুদিন আগেই সে সন্দীপ রায়ও ললিতা রায়ের সঙ্গে তার কাজের ব্যাপারে দেখা করতে গেছিল৷ যাবার আগেরদিন আমি তাকে বলেছিলাম কাজ হয়ে গেলে এই কথাটা যেন সে জেনে আসোসে জেনে ছিল এবং সেই কথাটাই আমি আপনাদের বলছি। ওনার নাকি সবচেয়ে পছন্দের খাবার ছিল লুচি, অড়হর ডাল বা আলুরদম।মাঝেমাঝে ছোলার ডালও খেতেন৷ আমরা ছোলার ডাল দিয়ে লুচি খাওয়ার কথা সকলেই জানি অড়হর ডালটা প্রথম শুনলাম। এর রেসিপিটা হল খুব সাধারণ। ওই জিরে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা আর একটু হিঙের ফোড়ন দিয়ে সাঁতলানো হত। এছাড়া উনি দই খেতে খুবই পছন্দ করতেন৷ রোজই খাবার পরে দই খেতেন। ছোট থেকেই মা সুপ্রভাদেবী ওনাকে কমলালেবুর রস খাবার একটা অভ্যাস করেছিলেন তাই রোজ উনি এটা খেতেন৷ খিচুড়ী খেতে উনি খুব ভালবাসতেন, সঙ্গে ইলিশ মাছ। মাছের মধ্যে ইলিশটাই ওনার জন্য বাড়িতে বেশি আসত৷ এছাড়া রুইমাছও খেতেন মাঝেমধ্যে৷ তবে অন্য মাছে ওনার আর ভক্তি তেমন ছিল না। পাঁঠার মাংস ওনার খুব প্রিয় ছিল তবে শেষের দিকে তার খাওয়াদাওয়ার ওপর নানান বিধিনিষেধ হওয়ার কারণে মাংসটা বন্ধ হয়ে যায়৷ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রায়বাড়িতে নলেনগুড় খুব আসত; সঙ্গে গুড়ের সন্দেশ ও মোয়া। বিলেতি খাবারও খেতে ভালোবাসতেন খুব,তাই মাঝেমাঝেই পরিবারসমেত পার্ক-স্ট্রিটের একটি রেস্তোরাঁ ‘স্কাইরুম'- গিয়ে ফিসফ্রাইও খেতেন প্রায়ই যদিও এখন রেস্তোরাটা আর নেই।"

'শংকর' এর লেখা 'চরণ ছুঁয়ে যাই' এ পাওয়া শংকর এবং সত্যজিৎ রায়ের কথোপকথন —

"লালমোহনবাবুর হয়েই ওঁর স্টাইলে জানতে চাইলাম সত্যজিতের খাওয়াদাওয়া, গপ্পোগুজবের কথা।
সত্যজিৎ বললেন, "আমার প্রিয় খাবার অঢ়র ডাল, সোনা মুগের ডাল । আগে মাংস খুব খেতাম — এখন সপ্তাহে একদিন। আগে মুরগি খুব ভাল লাগতো, এখন গা-সওয়া। ভাল ইলিশ, কিংবা ভাল রুই — অন্য কোনো মাছের ভক্ত নই। স্যরি, ভেটকি মাছের ফ্রাই আলাদা একটা ব্যাপার। সব্জির ভক্ত নই, বড় জোর কড়াইশুঁটি। মিষ্টি বলতে বর্ধমানের মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, জয়নগরের মোয়া, রাজস্থানের জিলিপি। মোস্ট ফেভারিট : নতুন গুড়ের সন্দেশ — বোথ কড়া অ্যান্ড নরম পাক । দইও ভাল লাগে, ছানার গজা। একটা জিনিস আজকাল পাই না, বোধ হয় উঠে গিয়েছে — মুগের নাড়ু । চায়ের সঙ্গে কেক-ফেক নয়— হয় লঙ্কা দিয়ে মুড়ি, না হয় চিড়েভাজা। দিনে চার-পাঁচ কাপ চা। একবার ফেলুদাকে দিয়ে একটা গল্পে মকাইবাড়ির চা খাওয়ালাম। তারপর ওই বাগানের কর্তৃপক্ষ মকাইবাড়ির চা নিয়ে হাজির। লাস্ট পনেরো বছর ধরে সাপ্লাই পাচ্ছি কনসেশনে। "
"গুজব আছে আপনি ধোঁকার অন্ধ ভক্ত। আপনার জন্মদিনে মাস্ট।
" দরাজ হাসিতে ঘর ভরিয়ে দিলেন সত্যজিৎ রায়। সে কয়েক বছর আগেকার কথা। "
"আপনিই পৃথিবীর একমাত্র সাহিত্যিক চলচিত্রকার যিনি নতুন একটা মিষ্টান্ন আবিষ্কার করেছেন। আপনি নিজেই তার নাম দিয়েছেন 'ডায়ামণ্ডা'।"
"ওটা একধরনের সন্দেশ—ডায়মন্ড শেপ। একটু কড়াপাকের দিকে। দাঁড়ান, দাঁড়ান—কে একজন ফোন করে ডায়ামন্ডা তৈরির অনুমতি চাইলেন, আমি ফোনেই পারমিশন দিয়ে দিলাম, কিন্তু আজও নমুনা পাইনি।"

এককথায় সত্যজিৎ রায় ভীষণ খাদ্যরসিক ছিলেন। তাঁর লেখনী ও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার সিকোয়েন্স পাওয়া যায়। একে একে যদি বলি, ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির মুরগীর মাংস, কৈলাসে কেলেঙ্কারির রুটি, মাংস, তরকা, মিহিদানা, নতুন গুড়ের সন্দেশ, খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা বা জয় বাবা ফেলুনাথ–এর সেই মাংসের কালিয়া, ডাল, ভাত, মাছের ঝোল, দই, জিলিপি, রাবড়ির কথা — তাও যেন কম হয়ে যায়। সবার জন্যে পেট পুরে খাবারের যে সিকোয়েন্স গুপী গায়েন বাঘা বায়েন বা হীরক রাজার দেশে উনি এঁকেছেন চলচিত্রে এক যুগান্তকারী উদাহরণ হয়ে আছে ।



২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তাঁর প্রিয় ও সেরা খাবার লুচির গল্প

-কী হে বামুনপণ্ডিত, কোথায় চললে? উত্তর এল, - "আমি বামুনপণ্ডিত নই। আমি ব্রাহ্মণ এবং পণ্ডিত "। এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছিলেন ঠাকুরদাসের সুপুত্র পরম শ্রদ্ধেয় ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২০-১৮৯১)। তিনি যেমন খেতে ভালোবাসতেন তেমন ভালোবাসতেন খাওয়াতে। তবে নিজের খাওয়ার মধ্যে তাঁর প্রিয় ও সেরা খাবার ছিল লুচি। দারুণ লোভ ছিল লুচিতে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তখন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র। তাঁদের কাব্যশাস্ত্রর অধ্যাপক ছিলেন জয়গোপাল তর্কালংকার তিনি সরস্বতী পুজো উপলক্ষে ছাত্রদের একটি শ্লোক লিখতে বললেন। ছাত্রদের তিনি এই রকম শ্লোক মাঝেমাঝেই লিখতে বলতেন। ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র জয়গোপালের কথায় শ্লোক লিখলেন :-

'লুচী কচুরী মতিচুর শোভিতং

জিলিপি সন্দেশ গজা বিরাজিতম্।

যস্যাঃ প্রসাদেন ফলারমাপ্রুমঃ

সরস্বতী সা জয় তান্নিরস্তরম্।'

শ্লোকার্থ হল, 'লুচি কচুরি মতিচুর, জিলেপি, সন্দেশ, গজা এই সব চমৎকার খাবার যার পুজোয় আমরা খেতে পাই, নিরন্তর জয় হোক সেই দেবী সরস্বতীর।' বিদ্যাসাগরের লেখা এই শ্লোক পড়ে জয়গোপাল ও অন্য ছাত্ররা হেসে উঠলেন। তিনি যারপরনাই ভক্ত ছিলেন লুচির। লুচি দেখলে না খাওয়া পর্যন্ত তাঁর যেন শাস্তি নাই। গরমাগরম ফুলকো কিংবা ঠান্ডা বাসি বলে কোনো কথা নেই। লুচি হলেই হল।

খাদ্য রসিক বিদ্যাসাগর খেতে ও খাওয়াতে খুবই ভালবাসতেন। ভালোবাসতেন তবে খুব খেতেন না। কখনো কখনো তিনি অতিথিদের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতেন। বিদ্যাসাগর নিয়ে রসিকতার শেষ গল্পটি দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর গবেষক-সাংবাদিক রূপকুমার বসু। প্রায়ই শ্রাদ্ধবাড়িতে তাঁর ডাক পড়ত শোকাবহ পরিবেশকে একটু সহনশীল করে তোলার জন্য। সেখানে কীভাবে লুচি সন্দেশ পরিবেশন করতে হবে তা নিয়ে একটি সরস নির্দেশ ছিল-

"হুঁ হুঁ দেয়ং হাঁ হাঁ দেয়ং দেয়ঞ্চ করকম্পনে
শিরসি চালনে দেয়ং ন দেয়ং ব্যাঘ্রঝম্পনে।"

বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে যখন কেউ বলবে, দিও না, তখন সত্যিই তাকে দেবে না।


পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2

অতিথিরা স্বভাবতই বিদ্যাসাগরের এই রসিকাতায় মজা পেতেন। ভোজনরসিক ঈশ্বরচন্দ্র নিজের মনের মতো খাবার পেলে তিনি জাতধর্ম মানতেন না। নির্বিকার চিত্তে অন্যের পাত থেকে তুলে বা কেড়ে নিতে এতটুকুও দ্বিধান্বিত হতেন না। জাতপাতের গোঁড়ামি তাঁর কোনো সময়েই ছিল না। পেলেন, তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত খাদ্যরসিক। সুন্দর রান্না করতেন বনেদি বাড়ির পাকা গিন্নির মতো নিজের হাতে লংকা, হলুদ ও অন্যান্য মশলা বেটে। যখনই সুযোগ পেতেন তখনই রান্না করে অপরকে খাইয়ে, এবং আনন্দ পেতেন নিজে খেয়ে। ঈশ্বরচন্দ্র একবার নিজে উদ্যোগী হয়ে গড়েছিলেন একটি 'ভোজন সমিতি'। উদ্দেশ্য ছিল, সকলকে যাওয়া-দাওয়া করিয়ে আনন্দমুখর করার জন্য। তখনকার দিনে এই সমিতির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সুখ্যাত ব্যক্তিদের অন্যতম অন্নদাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ মিত্র প্রমুখ।

বিদ্যাসাগর উঠোনে বালতির উনুনে পাঁঠার মাংস মধ্যে-মধ্যেই নিজে রাঁধতেন। মাংসে পেঁয়াজের চল ছিল না। নিত্য ঝোল-ঝাল ছাড়াও বড়িভাতে ও বড়ির অম্বল তাঁর প্রিয় ছিল। দশ-বারো রকমের অম্বল নাকি তিনি রাঁধতে জানতেন। বেলপোড়া, বেলের মোরব্বাও তিনি খুব পছন্দ করতেন। রসকরা, রসমুণ্ডি, বোঁদে, খাজা, গজা, মুড়কি, ছানাবড়া ইত্যাদি সরেশ জিনিস কোথায় কী পাওয়া যায়, তা বিদ্যাসাগরের খুব ভালোই জানা ছিল। তিনি খেতে ভালোবাসতেন, আর তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসতেন খাওয়াতে


৩. কেমন ভোজনরসিক ছিলেন ঋষি অরবিন্দ

এবার বলি ঋষি অরবিন্দের (১৮৭২-১৯৫০) কথা। তিনি ছিলেন বিপ্লবী এবং যোগী। সংসারজীবনে একসময় জামাই এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বেজায় ভোজনরসিক ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া করতে দীর্ঘ সময় নিতেন। শ্বশুরবাড়িতে সকলকে হতবাক করে তিনি চর্ব-চোষ্য খেতেন অনেক সময় নিয়ে। শ্বশুরবাড়িতে নানান ধরনের ব্যঞ্জনাদির সঙ্গে অবশ্যই তাঁর জন্য থাকত ডুবুডুবু তেলে ভাজা পাঁচ থেকে দশ সের ওজনের রুই মাছের মাথা। অরবিন্দ আয়েশ করে চিবিয়ে খেতেন বেশ রসিয়ে।


৪. শিবরাম চক্রবর্তীর সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিল রাবড়ি

একদিন বাউন্ডুলে ছেলে কিশোর শিবরাম গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে এলেন কলকাতায়। ভিখারিদের সঙ্গে থাকা-খাওয়া আর ফুটপাতে বা কোনো মন্দিরে গিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা হল লাইন দিয়ে। বার বার জায়গা বদল করে চলত তাঁর কাগজ বিক্রি। সারাদিন কাগজ বেচে যা কমিশন পেতেন উত্তরবঙ্গের চাচোল রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০), তাতেই তিনি বেজায় খুশি। ওই পয়সা দিয়েই চলত তাঁর খানাদানা আর সিনেমা দেখা। রোজের রোজগার তার রোজই শেষ। তিনি খেতে ভালোবাসতেন শুক্তো, শিঙাড়া, চপ, কাটলেট, আর নানান ধরনের সুস্বাদু ভাজাভুজি। অত্যন্ত ভোজনরসিক শিবরামের নানা পদে আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। কলেজস্ট্রিটের দিলখুশা-এ খেতে ভালোবাসতেন তিনি। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিল রাবড়ি |


৫. জাদুসম্রাট প্রতুলচন্দ্রের একান্ত প্রিয় ছিল কালীপুজোর রাতের খিঁচুড়ি প্রসাদ

জাদুসম্রাট প্রতুলচন্দ্র কথা তাঁর স্বনামধন্য পুত্র পি. সি. সরকারের (জুনিয়র) ভাষায়, জাদুসম্রাট প্রতুলচন্দ্র বলতেন, 'যারা ঘিয়ে ভাজা নিমবেগুন খায়নি, তারা জীবনে কিছু খায়নি।' নৈবেদ্যের মাখা প্রসাদ তাঁর প্রিয় তো ছিলই, বাঙাল প্রতুলের প্রাণ মন ভরে যেত কালীপুজোর রাতে খিঁচুড়িভোগ প্রসাদে। তাঁর একান্ত প্রিয় ছিল কালীপুজোর রাতের খিঁচুড়ি প্রসাদ। ভোজনরসিক না হলে সে কখনো রসিক হতে পারে না। ঐন্দ্রজালিক বিষয়টা যেমন মনের রসনা তৃপ্তি করে, তেমনই ইন্দ্রিয়ের আহার রসনায় কোনো পার্থক্য নেই। প্রদীপচন্দ্রের কথায়, 'মায়ের হাতের রান্না ছিল ভারী সুন্দর। মা ছিলেন রন্ধনশিল্পী। জাদুসম্রাট পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকতেন, পৌষপার্বণের দিনগুলি বাদ দিয়ে তিনি জাদুপ্রদর্শনের দিন ঠিক করতেন।

'পুকুরের চিংড়ি, নারকেলের দুধ আর দই দিয়ে মালাইকারি করতেন মা। এটি বাবার অত্যন্ত পছন্দের খাবার ছিল। খেতেনও মনভরে। জাদুসম্রাটের পুই, পালং থেকে শুরু করে সমস্ত রকম শাকসবজি, সব রকমের মাছে তাঁর রুচি ছিল না। তবে কাঁটা সমেত ছোটো ছোটো মাছ ছিল বেশি পছন্দের। রাজকীয় ইলিশে তাঁর কোনোকালেই অরুচি ছিল না। প্রদীপচন্দ্রের কথা, মা এত সুন্দর রান্না করতেন তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রতুলচন্দ্র চিকেন চাউমিন খেতে ভালোবাসতেন। হংকং-এ একবার প্রদীপচন্দ্রকে খাইয়ে বলেন, 'মশলা ছাড়া কী অপূর্ব স্বাদ এই চাউমিন-এর।


পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2

৬. কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সর্বাধিক প্রিয় ছিল শুধু খাসির মাংস

কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের (বাংলা ১২১৮-১২৬৫) ভালোবাসতেন মুগডালের খিচুড়ি আর মুগডালের ভাজা পুলি। নানান ধরনের খাবারে তেমন কোনো অরুচি ছিল না তবে তাঁর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল শুধু খাসির মাংস।


৭. ১৬ শতকের 'চণ্ডীমঙ্গল' রচয়িতা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী দেখা যাক তিনি কী কী খেতে ভালোবাসতেন

১৬ শতকের কথা। 'চণ্ডীমঙ্গল' রচয়িতা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (১৫০০-১৫৫১)। তাঁর খাওয়ার তালিকাটা কিন্তু কম বড়ো নয়। দেখা যাক তিনি কী কী খেতেন বা খেতে ভালোবাসতেন। নিমপাতা দিয়ে শুক্তো, বেগুন, সিম, বিউলির ডাল, চালকুমড়ো, পুঁইশাক, চালতার ঝোল, ফুলবড়ি, ক্ষীর, তিল ও নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠে, কাসুন্দি, পাকা চালতা, কাঁচা আম। মাছটা খুব বেশি পছন্দ করতেন বলে মনে হয় না। তবুও পছন্দের তালিকায় আছে চিতল মাছ, চিংড়ি, ছোটো মাছের চচ্চড়ি।

তবে নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সভাকবি ও অন্নদামঙ্গল রচয়িতা রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায়ের (১৭১২-১৭৬০) অন্যান্য অনেকের মতো খাসি কিংবা পাঁঠার মাংসের প্রতি তেমন আকর্ষণ ছিল না। ভেটকি, বাটা, কালবোশ, পাবদা আর ইলিশ পেলেই তাঁর দিলখুশ।


৮. রাজা রামমোহন ছিলেন বড়োই ভোজনরসিক

রাজা রামমোহন ছিলেন বড়োই ভোজনরসিক। তাঁর খাবার-দাবারের ব্যাপারে বেশি কথায় যাব না। অল্প কথায় বলি, একটা গোটা খাসি কিংবা পাঁঠা কাটা হল। তারপর রান্না করা হল পরিপাটি করে। সমস্ত রান্নাটা এনে ধরিয়ে দেওয়া হল রাজার হাতে। খাসিটাই তিনি রসিয়ে রসিয়ে শেষে ফেললেন সকলের সামনে। এবার কেউ যদি এক হাঁড়ি রসগোল্লা এনে তাঁকে অনুরোধ করেন খেতে, তাতে তাঁর না বলে কোনো কথা ছিল না। অম্লান বদনে খেয়ে নিতেন টপাটপ। প্রতিদিনের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে তালিকায় থাকত ৫০টা আম ১২টা নারকেল আর ১২ সের দুধ। এর জন্য সেকালে আজকের মতো একটা ডাইজিনও খেতে হত না তাকে। ইনিই হলেন রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩)। সে যুগে ভারতের মতো অনুন্নত দেশে ইংরাজি শিক্ষার প্রবর্তন ও প্রসার, সতীদাহ প্রথার অবলুপ্তি এবং সমাজ সংস্কারক হিসাবে যিনি চিরস্মরণীয়, তিনি হলেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর একান্ত আপন বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রানি রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস (যাঁর নামে বাবুঘাট এবং রাজচন্দ্রপুর স্টেশন) এবং প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ।

রামমোহন রায় ছিলেন ব্রাহ্মণ তবে তিনি মুসলমানি জীবনযাত্রায় ছিলেন অভ্যস্ত। মাংস খাওয়ায় তাঁর মোটেই অরুচি ছিল না। সেকালে জাত যাওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে তিনি মুসলমানদের সঙ্গে বসে খেতেন না। তবে তাঁর বাড়িতে থাকত একজন মুসলমান বাবুর্চি।


৯. মহানায়ক উত্তমকুমার এর খাওয়ার কথাগুলো খাওয়ার কথাগুলো স্বনামধন্য অভিনেতা ও ভাই তরুণকুমারের কথা ও কলমে

মহানায়ক উত্তমকুমার (১৯২৬-১৯৮০) সম্পর্কে নতুন করে বলার মতো কোনো কথা এ কলমে নেই। তাঁর খাওয়ার কথাগুলো বলি তরুণকুমারের (বুড়োদা) কথা ও কলমে। 'আকালের দিনগুলোয়, বাবা হয়তো আনাজপত্রের জোগান তেমন দিতে পারত না। মা অনুযোগ না করে বসে যেতেন সাধারণ জিনিস দিয়ে অসাধারণ সব রান্নার পদ বানাতে।' থোড়ের ছেঁচকি যে অত ভালো স্বাদের হয় মায়ের হাতের রান্না না খেলে জানতেই পারতাম না। মায়ের তৈরি পালং শাকের ঘন্টর স্বাদ তো এখনো জিভে লেগে আছে। ঘণ্ট তৈরির পর মা বড়ি আর নারকেল কোরা ছড়িয়ে দিতেন। রান্নাটা যেন ওতেই অমৃত হয়ে উঠত।' মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়। কেন আজকালকার মেয়েরা মায়েদের মতো রান্না করতে পারে না? আজকাল তো আবার বুকিং রেঞ্জ থেকে ওভেন—রান্নাঘরে কত জিনিসপত্র। অথচ সামান্য ডুমুরের তরকারির জন্য মাকে সেকালে কত মেহনতই না করতে হয়েছে।

আগের দিন মা ডুমুর কেটে জলে ভিজিয়ে রাখত। তাতে নাকি ডুমুরের কষ চলে যায়। তারপর আমাদের রাতের খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে এগারোটা থেকে লেগে পড়ত ডুমুর কাটতে। রাত বারোটাতেও অনেকদিন ঘুম ভেঙে দেখেছি, হাতে কাপড় বেঁধে মা একমনে ডুমুর কেটে চলেছে। ধৈর্যের এক অসামান্য প্রতিমা যেন।' “তখন আমাদের বাড়িতে ফ্রিজ ছিল না। ছোটো ডেকচিতে কাটা ডুমুরগুলো রেখে তার ওপর মা গামছা চাপা দিয়ে রাখত। পরদিন এক বাটি করে সেই ডুমুরের তরকারি আমাদের হাতে ধরিয়ে দিত, তখন তা মাংসের থেকেও বেশি উপাদেয় লাগত।


পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2

আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সামান্য ডুমুর নিয়ে কেন এত আদিখ্যেতা! নেহাতই অভাবের জন্য কি? না, পুরোপুরি তা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্তানের প্রতি মায়ের চিরকালীন স্নেহ-ভালোবাসা। রান্না সুস্বাদু হলে তাবেই আমরা ডুমুরের তরকারি খাব। আর ডুমুর খেলে যে সন্তানদের রক্ত পরিষ্কার হবে।' সে সময় এমনও গেছে, দিনের পর দিন আমরা কড়াই ভাল আর আলুপোস্ত খেয়েছি। আজও কোনো বাড়িতে নানান রকমারি পদের মধ্যে যদি ওই সামান্য কড়াই ডাল আর আলুপোস্ত দেয়- চেটেপুটে খেয়ে নিই।' তরুণকুমারের কথায়, কড়াই ডাল আর পোস্তকে মহানায়ক উত্তমকুমারও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দারুণ সম্মান জানাত। আমায় বলত-বুড়ো, এই দুটো রান্নাকে কখনো অবহেলা করিস না। এরা আমাদের অভাবের দিনের সাথী। মুখের দিনে এদের ভুলে যাওয়া অন্যায়। কথাটা সামান্য। কিন্তু ওই কথা কাটার মধ্যে ধরা পড়ে যায় দাদার বিশাল হৃদয়ের উদারতা।

'বাবা বাজার থেকে ফিরলেন হতাশ হয়ে। ভালো মাছ পাননি। যেটুকু মাছ বাজারে এসেছে, তারও চড়া দাম। বাজারের ব্যাগ খুলে মা দেখলেন—কিছুটা ভেটকি মাছের কাঁটা এনেছেন বাবা মাছের বদলে।' সাধারণত ফ্রাই করার জন্য বড়ো ভেটকি মাছগুলোর শরীর থেকে মাংস কেটে নেবার পর যে কাঁটা পড়ে থাকে তা দিয়ে ভালো তরকারি হয়। নিউ মার্কেটেও পাওয়া যায় ভেটকি মাছের কাঁটা। দাম আজকাল অবশ্য ভালোই নেয়। 'মা সেদিন কিন্তু বাবার রাজার দেখে মনের দুঃখ চেপে রাখতে পারেনি। মৃদু কণ্ঠে অনুযোগ করেছে বাবাকে আজ রবিবার। এত দেরিতে বাজার গেলে। কুচো মাছও পেলে না। ছেলেগুলো আনন্দ করে খেত।' 'মা জানত না, মাছের রকমফেরে খাবার আনন্দ তৈরি হয় না। আনন্দ জন্ম নেয় মায়ের হাতের স্পর্শে। আন্তরিকতায়। নইলে সেদিনই ভেটকি মাছের কাঁটার তরকারি আমি, দাদা বা মেজদা চেটেপুটে খাবই বা কেন?'


পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2
নবরাগ সিনেমার কুশীলব সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার

১০. অসামান্য অভিনেত্রী শ্রীমতী সুচিত্রা সেন কখনো বাইরের চা পছন্দ করতেন না

'সুচিত্রা সেন (১৯৩১-২০১৪ ) জাতীয় সম্পদ। অসামান্য অভিনেত্রী শ্রীমতী সেন কখনো বাইরের চা পছন্দ করতেন না। তার জন্য স্টুডিয়োতে চা তৈরি হত আলাদা ভাবে। চা পাতা দুধ চিনি ইত্যাদি রাখা থাকত। তারপর তা ঢালা হত সুদৃশ্য টি-পটে। চিনি থাকত আলাদা পাত্রে। চায়ের কাপ ডিশের ব্যাপারে তিনি ছিলেন ভীষণ খুঁতখুঁতে। সামান্য দাগ বা ছোপ থাকলে চলবে না। চায়ের কাপ-ডিশ, টি-পট, চিনি, দুধ ইত্যাদি তাঁর কাছে এনে দেওয়া হত সুন্দর একটা ট্রেতে করে। তারপর তিনিই চা বানাতেন নিজে। সকালে ব্রেকফাস্ট বলতে এক একদিন এক একরকম খেতেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেতে ভালোবাসতেন। কোনোদিন দুধ-রুটি, কোনোদিন লুচি বা পরোটা, সঙ্গে মাখামাখা একটু আলুর তরকারি। এসব খেতেন তিনি সকালে পুজো সেরে। সুচিত্রা সেন কখনো ডায়েটিং করতেন না। তাঁর প্রিয় খাবারের মধ্যে ছিল ভাত, মাছের ঝোল, গন্ধরাজ লেবু, পাঁচমিশেলি তরকারি। মাছের মধ্যে চারাপোনা ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দের পোলট্রির ডিম নয়, তিনি পছন্দ করতেন দেশি মুরগির ডিম এবং এগ চাউমিন। এছাড়াও তাঁর প্রিয় মাছ ছিল দেশি মাগুর, বড়ো রুইমাছের পেটি, পমফ্রেট, কই, চিংড়ি ও ভেটকি। তাঁর আর একটি পছন্দের খাবার ছিল ‘রসুন-ভেটকি'। বোনলেস চিলি চিকেন হলে তো কথাই নেই যদি সেটা ট্যাংরার চায়না টাউনের হয়। তাঁর পছন্দের তালিকার বাইরে ছিল যে কোনো মাদকদ্রব্য। প্রতিবছর বাড়িতে লক্ষ্মীপূজো হত। লোকজন আসতেন। খিচুড়ি আর ইলিশ মাছভাজা দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন করতেন তিনি। এটি তাঁর প্রিয় খাবারের অন্যতম ।


১১. স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী, চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা কিশোর কুমার, সংগীতশিল্পী রাহুল দেববর্মণ ও মান্না দে-র অতি প্রিয় খাবার গুলো

স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী, চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা কিশোর কুমারের (১৯২৯-১৯৮৭) প্রিয় খাবার ছিল চিংড়ির মালাইকারি। ভেটকি মাছের ঝাল। রাহুল দেববর্মণের (১৯৩৯-১৯৯৪) বিভিন্ন খাবারের মধ্যে অত্যন্ত প্রিয় ছিল চিংড়ির চপ। মান্না দে-র অতি প্রিয় ছিল মাংসের কাটলেট, ফিশ কাটলেট, চিকেন আর শাহি বিরিয়ানি।


১২. চিত্তরঞ্জন মটন পোলাও খাওয়ার পর ২ সের রসগোল্লা খেতে পারতেন

অত্যন্ত দয়ালু চিত্তরঞ্জন দাশের (১৮৭০-১৯২৫) কথা। তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী ছিলেন রান্নায় মা অন্নপূর্ণা। চিত্তরঞ্জন মটন পোলাও খাওয়ার পর ২ সের রসগোল্লা খেতে পারতেন। ভালোবাসতেন মায়ের হাতের রসগোল্লা আর পাটিসাপটা। বাসন্তী দেবীর হাতের ফুলকপির তরকারি, চিংড়ির কাটলেট হলে মনটা তার ভরে যেত দেবর্ষি নারদীয় আনন্দে।


পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2

কৃতজ্ঞতা স্বীকার - গ্রন্থবিবরণী

বিভিন্ন সংবাদপত্র ও নানা বই থেকে এ লেখার রসদ সংগ্রহ করা হয়েছে। কখনো হুবহু লেখা তুলে ধরা হয়েছে, কখনো করা হয়েছে ভাষার পরিবর্তন।
  • চরণ ছুঁয়ে যাই - শংকর
  • আমরা ও ফেলুদা - চিরঞ্জিত দাস
  • শারদীয়া নবকল্লোল - শিবশঙ্কর ভারতী
  • বঙ্গ মনীষীদের রঙ্গ রসিকতা - অংশুমান চক্রবর্তী
  • বাঙালির রঙ্গ বঙ্গ চর্চা - চন্ডী লাহিড়ী
  • পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত দ্বিতীয় খন্ড
  • মহাপীঠ তারাপীঠ - হারাধন মুখোপাধ্যায় পৃষ্ঠা ২৫০
  • নারায়ন দেবনাথ সমগ্র পর্ব ১ - পৃষ্ঠা ৫০৪
  • হাতে পাঁচটি নীল পদ্ম - হুমায়ুন আহমেদ - পৃষ্ঠা ৪৮৪
  • আচার্য জগদীশচন্দ্র আমার বাল্যস্মৃতি - শ্রীরথীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বিশ্বভারতী পত্রিকা বর্ষ ১৫ পৃষ্ঠা ১০৯
  • মহাপীঠ তারাপীঠ - হারাধন মুখোপাধ্যায় - পৃষ্ঠা ২৫০
  • পিঞ্জরে বসিয়া - কল্যাণী দত্ত - পৃষ্ঠা ৬
  • মনীষীদের অসংখ্য জীবনীগ্রন্থ

পরবর্তী অংশ :মনীষীদের খাওয়া দাওয়া ২ পর্ব - Bengali legends and their favorite foods part 2